মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখার ১০ টি উপায় জেনে নিন।
মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখার উপায় ১০ টি উপায় জেনে নিন। মাদকে ছে গেছে সারা বিশ্ব , তার থেকে আমাদের বাংলাদেশও মাদকে এগিয়ে কোন অংশ কম নেই। বাংলাদেশে মাদকের কারণে ধ্বংস হচ্ছে বহু কিশোর কিশোরীর জীবন। বহু সংসার, ভালো ভালো শিক্ষার্থী, দেশের মেধা রত্ন ঝরে যাচ্ছে একমাত্র এই মাদকের কারণে।
তাই আজকে আমি এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য সাজিয়েছি যারা মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান। আপনার কাছের লোকজনকে মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত করতে চান। তাই আজকে আমি মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য দশটি উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। তাই আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করেন আশা করি আপনার কাজে আসবে।
মাধব থেকে নিজেকে দূরে রাখা ১০ টি উপায় জেনে নিন।
অনেকে আছেন যে মাদকাসক্তে জড়িয়ে পড়েছেন এখন চাচ্ছেন আপনি তা থেকে ফিরে আসতে। কিন্তু শত চেষ্টা করলেও আপনি পারছেন না। তাদের জন্য আমার এই দশটি উপায়।
- ১ নিজেকে নিজের কন্ট্রোল করা
- ২ ভালো পরিবেশ ও সৎসঙ্গবদ্ধ হওয়া
- ৩ ধর্মীয় বিধান মেনে চলা
- ৪ সামাজিক অবস্থান বোঝা
- ৫ দৈনন্দ জীবনের চব্বিশ ঘন্টার রুটিন করা
- ৬ পরিবারের সঙ্গে সময় দেওয়া
- ৭ মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া
- ৮ সব থেকে কাছের মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া
- ৯ সাইকোলজিস্ট অথবা মানসিক ডাক্তার দেখানো
- ১০ নিজ ইচ্ছায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে স্বর্ণপর্ণ হওয়া
মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখার দশটি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-
১ নিজেকে নিজের কন্ট্রোল করা: একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির প্রথমত কাজ হচ্ছে নিজেকে নিজের কন্ট্রোলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা। মনে করেন আপনি গাজা, মত, ইয়াবা সহ মারাত্মক কোন মাদকদ্রব্য দ্বারা আপনি আসক্ত। সেই ক্ষেত্রে আপনার করণীয় হলো যে ড্রাগ অথবা মাদক যেটাই আপনি গ্রহণ করেন না কেন সেটা তুলনামূল ক কমানোর চেষ্টা করবেন। মনে করি একজন ব্যক্তির 24 ঘন্টার মধ্যে তার চারবার মাদকদ্রব্য সেবন করতে হয়।
সেই ক্ষেত্রে আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিদিন এর তুলনায় কমিয়ে আনতে। কারণ মাদক এমন একটা বিষয় যে একবার এই মাদকে আসক্ত হয় হুট করে তা ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না। তাই যেখানে আপনি প্রতিদিন 24 ঘন্টায় চার বার সেবন করেন। সেখানে আপনি প্রথম দিন থেকে তিনবার করে সেবন করবেন। এরকম তিনবার করে চার থেকে পাঁচ দিন চেষ্টা করবেন। তারপরে আপনি ২৪ ঘন্টায় মাত্র দুবার করে মাদক সেবন করার চেষ্টা করবেন।
তার সাত দিন পরে আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একবার করে মাদক সেবন করার। তারপরে আস্তে আস্তে চেষ্টা করবেন যে আপনি ২৪ ঘন্টায় একবারো মাদক সেবন করবেন না। এভাবে আপনি যদি নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন তাহলে দেখবেন যে মাদক থেকে ১ - ২ মাসের মধ্যে আপনার নিজের মাঝে অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে।
২ ভালো পরিবেশ ও সৎসঙ্গবদ্ধ হওয়া: আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন নিজেকে একটি ভাল পরিবেশে রাখা। নিজেকে একটা ভালো পরিবেশে ও ভালো কাজে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত রাখা। এবং এমন কিছু বন্ধু-বান্ধবী সাথে ওঠাবসা করবেন যারা মাদক থেকে দূরে থাকে ও আপনাকে সম্পূর্ণ মেন্টালি সাপোর্ট দিবে ও আপনাকে বুঝবে। তাদের সাথে আড্ডা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যখন আপনার ইচ্ছা হবে মাদক সেবন করার তখন কোন একটা ভালো মনোরম পরিবেশে কাছের কোন মানুষকে নিয়ে ঘুরতে অথবা আড্ডা দিতে চলে যাবেন। দেখবেন আপনার ভালো লাগবে ও মাদক থেকে ফিরে আসতে পারবেন।
৩ ধর্মীয় বিধান মেনে চলা: আমাদের প্রতিটি মানুষেরই উচিত যে যে ধর্মেরই হোক না কেন তার সেই ধর্মের বিধিবিধান মেনে চলা। বিশেষ করে যেমন ইসলাম ধর্মে মাদককে হারাম বলেছে। এই মাদক সেবনকারীর মৃত্যুর পর তার আজাব ও কবরের শাস্তি সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি কোরআনের ও ইসলাম ধর্মে মাদক এর সেবনকারীর যে ভয়াবহ স্বাস্থ্যের কথা আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, কেউ যদি সেটা পরে এবং হৃদয় দিয়ে অনুভব করে ও আল্লাহকে ভয় পায়। তাহলে আমি নিশ্চিত সে কখনোই আর মাদক আসক্ত হবে না। তাই আমাদের প্রতিটা মানুষের উচিত ধর্মীয় মেনে চলা। আর এই ধর্মীয় অনুশাসন যদি কেউ মেনে চলে সে মাদক না শুধু সে অন্য কোন পাপ কাজ থেকেও নিজেকে ধরে রাখবে।
৪ সামাজিক অবস্থান বোঝা: মানুষ সামাজিক জীব এটা আমাদের মানতে হবে। তাই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সমাজ কতটা নোংরা ভাবে দেখে সেটা যদি একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি অনুভব করতে পারে তাহলে সে মাদক থেকে নিজেকে অনেক সরিয়ে আনতে পারবে।
একজন সন্তান যখন মাদকাসক্ত হয় সেই সন্তানের পরিবার কে মানুষ সমাজে হয়ে চোখে দেখে। তাই যদি সেই সন্তান একবারও ফেল করে যে আমার জন্য আমার পরিবার সমাজের কাছে ছোট হচ্ছে তাহলে হয়তো নিজের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন আনতে পারবে। আর একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির কথার কোন মূল্য নেই সমাজে। সে সমাজের কাছে একটি বোঝা ছাড়া আর কিছুই না। এসব কিছু যদি একজন ব্যক্তি বিবেচনা করে তাহলে তার ভিতরে নিজেকে শুধরানো খুবই সহজেই সম্ভব।
৫ দৈনন্দ জীবনের চব্বিশ ঘন্টার রুটিন করা: একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির দৈনন্দ জীবনের একটি সুন্দর রুটিন করতে হবে। যে সে ২৪ ঘন্টায় কি কি কাজ করবে আর নিজেকে কিভাবে ব্যস্ত রাখবে।কেউ যদি ২৪ ঘন্টার একটি সুন্দর রুটিন করতে পারে তাহলে সে মাদক থেকে অনেকটাই সরে আসতে পারবে। কারণ একজন মানুষের জীবনের একটা সঠিক রুটিনই পারে একটি সুন্দর জীবন গড়ে দিতে।চব্বিশ ঘন্টার রুটিনে আপনি যদি নিজেকে অনেক ব্যস্ত রাখেন দেখবেন আপনার নিজেরই অনেক ভালো লাগছে।
৬ পরিবারের সঙ্গে সময় দেওয়া: নিজেকে কখনো ঘরের এক কোণে বন্দী করে রাখবেন না পরিবারের সবার সাথে ফ্রি হবেন তাদের সাথে ভালো সময় কাটাবেন। আর আপনার এক একজন পরিবারের সদস্যের কথা ভাববেন যে আজ যদি এই মাদকের কারণে আপ্নার কিছু হয়ে যায় এদের অবস্থা কি হবে। এইটা যদি আপনি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার দ্বারা মাদক থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
শুধু একটা জিনিস চিন্তা করবেন যে মানুষ পরিবারের জন্য কতই কিনা করে আর আমি শুধু মাদক ছেড়ে কেন একটা স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারি না। এই প্রশ্নটা যদি আপনি নিজের কাছে নিজেই করেন দেখবেন আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন।
৭ মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া: মাদকের ভয়াবহতা ও ক্ষতি সম্পর্কে আপনার ভালোভাবে জানা উচিত। একজন মানুষ তিলে তিলে মৃত্যু দিয়ে ঢলে পড়ে একমাত্র এই মাদকের কারণে। দীর্ঘদিন মাদক সেবন করার ফলে ক্যান্সার সহ আরো বিভিন্ন ভয়াবহ রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে। একজন মাদকাসক্ত লোকের জন্য তার ঘরের শিশু পর্যন্ত মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে, এইসব বিষয়ে জানতে হবে এবং নিজের মনের ভিতরে অনুভূতি দেখাতে হবে। আর মাদক সেবনকারী ও মাদক ব্যবসায়ী সম্পর্কে সরকারিভাবে যেসব আইন জারি করেছে সেসব সম্পর্কে জানতে হবে।
৮ সব থেকে কাছের মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া: মাদক থেকে আপনি যখন নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে যাবেন তখন খুজবেন এমন একজন ব্যক্তি যার সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো ও সে আপনাকে বোঝে। এমন একজন ব্যক্তির কাছে আপনি সাহায্য চাবেন ও পরামর্শ যাবেন যে আপনি মাদকাসক্ত পর থেকে বের হয়ে আসতে চান।
কার কাছে আপনি আপনার মনের সকল দুঃখ কষ্ট খুশি সম্পর্কে আলোচনা করবেন। কারণ প্রতিটি মানুষের জীবনে একজন ভালো বন্ধু থাকা দরকার যার কাছে মনের সব দুঃখ কষ্ট সুখ বেদনা ভাগ করা যায়। আপনার কষ্টের কথা যখন আপনার সব থেকে কাছের কাউকে বলবেন দেখবেন আপনার মন অনেক হালকা হয়ে গেছে। কখনো নিজের কষ্টগুলো নিজের মনে একাকীত্ব পোষণ করবেন না। কারণ কষ্ট ও দুঃখ জিনিসটা এমন যেটা আপনার মনের ভিতর যত পোষণ করবেন ততই বাড়বে। তাই সবচেয়ে কাছের মানুষের কাছে আপনার প্রতিনিয়ত দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করবেন।
৯ সাইকোলজিস্ট অথবা মানসিক ডাক্তার দেখানো: একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের অবশ্যই উচিত সাইকোলজিস্ট ও মানসিক ডাক্তারের কাছে শরণাপন্ন হওয়া। তারা যে পরামর্শ ও ওষুধের নিয়ম কানুন মেনে চলতে বলবে সেগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা। দেখবেন আপনার অনেক পরিবর্তন এসেছে আর আপনি মাদক থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন।
১০ নিজ ইচ্ছায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে স্বর্ণপর্ণ হওয়া: যদি দেখেন আপনি নিজেকে নিজে আর কন্ট্রোল করতে পারছেন না তখন পরিবারের সাথে আলোচনা করে ও পরিবারের উচিত মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নেয়া। তবে মাদক নিরাময়ের কেন্দ্রের দেয়ার আগে একটি বিষয় খেয়াল করতে হবে সেখানে তাদের পরিবেশ কেমন।
প্রথমে নিরাময় কেন্দ্রে দেওয়ার আগে খোঁজ নিবেন যে সেখানকার লোকজন মাদকাসক্ত রোগীর সাথে কি ধরনের আচার-আচরণ করে। অনেক মাদক নিরাময় কেন্দ্র আছে যেখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সাথে খুব বাজে আচরণ করা হয় এবং মারধর করা হয়। এই বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে তারপর তাকে নিরাময় কেন্দ্র দেবেন। এমন একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে শরণাপন্ন হতে হবে যেখানে তারা ভালোবাসা ও মানসিক সাপোর্টের মাধ্যমে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনবে।