সিজারের পর কতদিন বেল্ট পরতে হয় || কোমরের বেল্ট পরার নিয়ম
সিজারের পর কতদিন বেল্ট পরতে হয় || কোমরের বেল্ট পরার নিয়ম |
কেন এই বেল পড়তে হয় এবং এই বেল পড়ার উপকারিতা কি কি।
প্রথমে আমরা জানবো সিজারের পর কেন এই বেল্ট পরতে হয়। স্বাভাবিক প্রসবের
তুলনায় সিজারিয়ান অপারেশন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। সিজারিয়ান অপারেশন মায়ের
জন্য কিছু শারীরিক জটিলতা তৈরি করে। অপারেশনের পর আপনার পেটের কাটা অংশে
নড়াচড়া থামাতে বেল্টটা কাজে আসে।
এখন আমরা জানবো সিজারের পর বেল্ট পড়ার উপকারিতা। সন্তান জন্ম দেওয়া একজন
নারীর জীবনে অনেক কঠিন একটা সময়। গর্ভবতী মায়ের সন্তান গর্ভে থাকাকালীন
যেমন তার যত্ন নিতে হয় ঠিক তেমনি সন্তান জন্মদানের পরে তার অনেক সাবধানতা
অবলম্বন করতে হয়। স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজার করলে মা ও সন্তানের যত্ন
নেওয়া টা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। গর্ভধারণের পরবর্তী সময়ে ওজন এত
সহজে কমে না।
কোমরের বেল্ট পরার নিয়ম
বিশেষ করে সিজারিয়ান হলে পেটের মেদ কমিয়ে পূর্বের অবস্থায় যেতে
অনেক বেশি সময় লাগে। যেকোনো ধরনের পেটের মেদ কমানো খুব সহজ নয় এবং সিজার
করলে অবস্থাটা আরো বেশি কঠিন হয়ে যায়। কারণ, তখন স্ট্যান্ডার্ড অ্যাবডোমিনাল
এক্সারসাইজ করা যায় না। বিকল্প উপায়ে সিজারের পরবর্তী পেটের মেদ কমানো যায়। সিজারের পরে কোমরে বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বেল্ট ব্যবহারে কোনো সমস্যা নয়। সার্জারির পর হাঁচি-কাশি ও টয়লেট ব্যবহার করার সময় বেল্ট ব্যবহার ভালো। এতে হাঁটতে সুবিধা হবে। নরমাল ডেলিভারির পর একদিন পর থেকেই বেল্ট পরা
যায়। তবে সিজারের পর সেলাই শুকানোর পর থেকেই বেল্ট পরা যায়। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে অন্তত ৪০দিন পর্যন্ত বেল্ট ব্যবহার করা উত্তম।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ?
সিজারের পরে ইনফেকশনের লক্ষন কী তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে যে সিজার
কী।
সিজার টা হচ্ছে মূলত, একজন মা যখন প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তান জন্মদানে কোনো
বাধার সম্মুক্ষিন হয়, বা সন্তান জন্মদানে মা এবং শিশুর জীবন এবং স্বাস্থ্য হুমকির
সম্মুখিন হতে পারে। তখন যে অপারেসন এর মাদ্ধমে শিশুকে মায়ের পেট থেকে বের করা
হয়, তাকে ই মূলত সিজার বলে।
এবার আমরা জানতে পারি যে সিজারের পরে কাটা স্থানে ইনফেকশনের লক্ষন
গুলো কী কী।
সিজারের কাটা যায়গাটা ফুলে যাবে এবং একটু লাল হবে।
সিজার এর কাটা স্থান টা অনেক ব্যাথা করবে।
সিজার করানোর পরে মায়ের অনেক জ্বর আসতে পারে।
সিজারের কাটা স্থান দিয়ে পুজ জাতীয় তরল বা পানি বের হবে।
সিজার করার পরে মায়ের প্রসাবে জ্বালাপোরা হতে পারে।
সিজারের পরে মায়ের পা ফুলে যেতে পারে।
সিজারের পরে মায়ের মাসিকের রাস্তায় দূঃগন্ধযুক্ত তরল পানি বা জমাট রক্ত
দেখা যেতে পারে।
বেল্ট ব্যবহারের সুবিধা
এটি পেটের চারপাশে আরামদায়ক টাইট একটি বন্ধনী হিসেবে কাজ করে। হালকা
প্রেশারের কারণে পেটের থলথলে ভাব কমে যায়।
সিজারের সময় পেটের কয়েক স্তরের মাংস পেশি কেটে যায়। বেল্ট পরার ফলে প্রেশারের
কারণে সেই পেশি জোরা লাগার দ্ধতি ত্বরান্বিত হয়।
বেল্ট ব্যবহার করলে নবজাতককে কোলে নিতে, দুধ খাওয়াতে, নাড়াচাড়া করতে সুবিধা হয়
এবং ব্যথা কম হয়।
সিজারের পর নিয়মিত বেল্ট ব্যবহার করলে প্রথম ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই জরায়ু
পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। কোমর ব্যথায় উপশম হয়।সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারে যেসব
বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
সঠিক মাপের বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
বেল্ট এমনভাবে বাধবেন যেন তা খুব বেশি শক্ত বা খুব বেশি ঢিলেঢালা না হয়। সহনীয় হয় এমনভাবে বাধবেন।
খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর বেল্ট বাঁধবেন। ঘুম এবং গোসলের সময় বেল্ট পরবেন না।
ইলাস্টিক ফাইবারের বেল্ট ব্যবহার করবেন। বেল্ট ভিজে গেলে ভেজা বেল্ট
পরবেন না। এতে রেশ হতে পারে।
সিজারিয়ান অপারেশনের পরে কিছু দিন ভারী ব্যায়াম করতে পারবেন না বলে আপনি
আপনার পূর্বের আকার ফিরে পাবেন না এমন ভেবে হতাশ হবেন না। ধৈর্য ধারণ করুন ও
বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে নিন এবং চেষ্টা করুন।
এখন আমরা জানবো যে সিজারের পরে বেল্ট কত দিন পড়তে হয়।
সিজারিয়ান অপারেশন করার পর এক বা দুই সপ্তাহ বেল্ট ব্যবহার করলেই হয়।
কোমরের বেল্ট পরার কিছু অপকারিতা রয়েছে:
১. ত্বকে সমস্যা: দীর্ঘকাল ধরে বেল্ট পরার কারণে ত্বকের নিচে মচকের অংশে চাপ পড়তে পারে, যা ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
২. পেটের মাসপেশীতে সমস্যা: অতিরিক্ত চাপের কারণে পেটের মাসপেশীতে সমস্যা হতে পারে এবং এটি মচকে আরও প্রবৃদ্ধি করতে পারে।
৩. শ্বাসকষ্টের সমস্যা: কিছু মানুষের জন্য কোমরের বেল্ট পরার পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে, এবং এটি দীর্ঘকাল বেল্ট ব্যবহারের কারণে হৃদরোগের জোখম বাড়তে পারে।
৪. কোমর ও পুটকি প্রবাহে বিঘ্ন: কোমরের বেল্ট পরলে কোমর এবং পুটকির প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে, যা পেটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এই অপকারিতা গুলি আপনার স্বাস্থ্য অবলম্বনে হতে পারে, তাই কোমরের বেল্ট ব্যবহারের আগে এবং এর সময় সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বেল্ট ব্যবহার করতে প্রস্তুত হন, তবে সঠিক মাত্রা এবং প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কোনও সমস্যা অনুভব করেন, তবে তা দ্রুত চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন।