প্রস্টেট ক্যান্সার হলে কি খাওয়া যাবে না?

 প্রস্টেট ক্যান্সার হলে কি খাওয়া যাবে না? প্রোস্টেট  ক্যান্সার হল যখন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে প্রোস্টেট টিউমার তৈরি হয়। প্রোস্টেট হল একটি গ্রন্থি যা মূত্রনালীকে ঘিরে থাকে এবং মূত্রাশয়ের ঠিক নীচে থাকে। এটি আখরোটের মতো আকৃতির এবং এটি একজন মানুষের তলপেটের অঞ্চলে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ হল সেমিনাল ফ্লুইড তৈরি করা।


প্রস্টেট ক্যান্সার হলে কি খাওয়া যাবে না?



পুরুষের একটি বিশেষ ধরনের ক্যানসার হলো প্রোস্টেট ক্যানসার। পুরুষের প্রোস্টেটগ্রন্থি এতে আক্রান্ত হয়। সাধারণত ৫০-ঊর্ধ্ব পুরুষের মধ্যে এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।

 প্রস্টেট ক্যান্সার হলে কি খাওয়া যাবে না?


প্রোস্টেটগ্রন্থির আকার অনেকটা কাজুবাদামের মতো। মূত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মূত্রনালি বের হয়েছে, সেটির চারপাশজুড়ে এই গ্রন্থি বিদ্যমান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র ও বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছুটা তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয়, সেটি আসলে শুক্রাণু ও এই তরল পদার্থের মিশ্রণ।


বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রোস্টেটগ্রন্থির মধ্যে কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে। তবে প্রোস্টেট বৃদ্ধি মানেই ক্যানসার নয়। বেশির ভাগ হলো বিনাইন প্রোস্টেট এনলার্জমেন্ট, মানে এগুলো ক্যানসারে রূপান্তরিত নয়। প্রোস্টেট ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা এখনো সম্ভব হয়নি।


সাম্প্রতিক গবেষণায় একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণার রিপোর্ট বলছে, আমরা রোজ যে সব খাবার স্বাস্থ্যকর ডায়েট প্ল্যানে রেখে খাই, সেই সব খাবারই প্রস্টেট ক্যানসারের (Prostate Cancer) ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। 


আপনারা জানেন নিশ্চয়ই সবধরনের ক্যান্সারের মধ্যে  ক্যান্সার ঠিক কতটা ভয়ানক হতে পারে! তাই আজই হাই প্রোটিন খাবার সম্বন্ধে সাবধান হন। বেশিরভাগ হাই প্রোটিন যুক্ত খাবারে কোলিন (choline) নামক একটি উপাদান উপস্থিত থাকে। গবেষণা বলছে, কোলিন নামক উপাদানটি বেশি পরিমাণে শরীরে পৌঁছালে  প্রোস্টেট   ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

 প্রস্টেট ক্যান্সার হলে কি খাওয়া যাবে না?

খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসের উপরই নির্ভর করে আমাদের সুস্থ থাকা। যে কারণে চিকিৎসকরা সবসময় সুষম আহারের উপর জোর দেন। কিন্তু এমনও কিছু ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবার রয়েছে যা বাড়িয়ে দিতে পারে পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি। 


ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় কোলিনের ভূমিকা নিয়ে একাধিক গবেষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণা দেখা গিয়েছে, শরীরে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় কোলিন চলে যায় তাহলে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ বেড়ে যায়। আর এই কোলিন বেশ কয়েকটি পুষ্টিকর খাবারেই রয়েছে। ডিম, দুধ এবং মাংসের মতো খাবারে এই কোলিন সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।


কোলিন একটি অপরিহার্য পুষ্টি যা কোষের ঝিল্লির কাঠামোগত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি এটি নিউরোট্রান্সমিশন এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গবেষণা বলছে, যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক সারাদিনে ৪৫০ মিলিগ্রাম কোলিন গ্রহণ করে, তাহলে এটি শরীরের জন্য বিপজ্জনক। অন্যদিকে, একটা ডিমে ১৫০ মিলিগ্রাম কোলিন থাকে। এর পাশাপাশি দুধ ও মাংসের মধ্যেও বেশ ভাল পরিমাণে কোলিন রয়েছে। সুতরাং, আপনি যদি দিনে এই তিন উপাদান বেশ পরিমাণে খান তাহলে কোলিনের মাত্রা ৪৫০ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এখানেই তৈরি হয় প্রস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য পুরুষদের কোলিনের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত। পাশাপাশি কী ধরনের ডায়েট গ্রহণ করছে তার উপরও নজর দেওয়া দরকার। আর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারেও প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। যদি স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও বেড়ে যায়। এর পরিবর্তে আপনি ফল, শাকসবজি, বীজ, বাদাম খেতে পারেন।


প্রোস্টেট ক্যান্সারে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে 

প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মতো নির্দিষ্ট কিছু খাবারের উচ্চতা স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ প্ররোচিত করা এবং প্রোস্টেট হরমোন নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করা।


অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, লবণ এবং লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস বেশি পরিমাণে পানীয় কমানোর চেষ্টা করুন। সবসময় যোগ করা স্বাদ বা প্রিজারভেটিভ এড়িয়ে চলুন। কম চর্বিযুক্ত খাবার সর্বদা সর্বোত্তম বিকল্প নয় - কিছুতে এখনও চিনি বা ক্যালোরি বেশি থাকতে পারে।


প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তদের জন্য আরও উদ্ভিদ-কেন্দ্রিক খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ কিছু গবেষণায় ডিম এবং লাল মাংস সহ কিছু প্রাণীর পণ্যকে প্রোস্টেট ক্যান্সারের আরও গুরুতর রূপের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। যাইহোক, প্রোস্টেট ক্যান্সারের সাথে বসবাসের সময় সামগ্রিক স্বাস্থ্যের প্রচারের ক্ষেত্রে আপনার খাদ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।


একটি খাদ্য প্রোস্টেট ক্যান্সার নিরাময় করতে পারে?

একটি পুষ্টি-ঘন খাদ্য অনুসরণ করা রোগের অগ্রগতির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি ওষুধ বা চিকিৎসার জায়গা নিতে পারে না। কার্যকরভাবে রোগের চিকিত্সা এবং এর পুনরাবৃত্তি দূর করতে বা কমাতে নিয়মিত চিকিৎসা যত্ন প্রয়োজন। 



পরামর্শ : বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষদের প্রস্রাব করতে যেকোনো সমস্যায় দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করা উচিত।


Next Post Previous Post