পৃথিবীর গভীরতম সোনার খনি কোনটি

সোনার খনি শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানব ইতিহাসে প্রযুক্তি ও অভিযানের প্রতীকও। বিশ্বের সবচেয়ে গভীর সোনার খনি বহু দশক ধরে মানুষের কৌতূহল ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব:


পৃথিবীর গভীরতম সোনার খনি কোনটি?

তিমির গভীরতম সোনার খনির  অবস্থান, ইতিহাস এবং উৎপাদন ক্ষমতা

স্বর্ণের খনির প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

স্বর্ণের খনির অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব

অন্যান্য  স্বর্ণ খনির সাথে তুলনা

ভবিষ্যতে স্বর্ণ খনি ও স্বর্ণ শিল্প


Witwatersrand Basin খনির অবস্থান এবং ইতিহাস



পৃথিবীর গভীরতম সোনার খনি কোনটি

১. ডিপস ড্রিম: উত্তর আফ্রিকার রূপকথা


খনির নাম: এম্পায়ার খনি (Witwatersrand Basin, এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত। এই খনির গভীরতা প্রায় ৩,৯০০ মিটার (১২,৭৯০ ফুট) নিচে। পৃথিবীর গভীরতম খনির মধ্য এই স্বর্ণ-খুনি অন্যতম। 


প্রতিমাসে এই খনি থেকে  প্রায় ১০ কোটি টন শিল এবং তার মধ্যে স্বর্ণের অংশ। 

এই খনিটি প্রতিষ্ঠা: ১৮৯০-এর দশকে। 

এই খনি মানুষের কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এখানে খনির তাপমাত্রা প্রায় ৫০°C পৌঁছায়, যা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়। এবং কর্মীরা যখন স্বর্ণ উত্তোলন করে খুবই ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে সময় বার করে। এবং তাদের কাজে অত্যন্ত ঝুঁকি থাকে। 

উৎপাদন পদ্ধতি:

শুরুতে এই খনিতে ওপেন-পিট মাইনিং শুরু হয়েছিল, পরে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা হয়। এবং এর জন্য স্বর্ণ উৎপাদন বহুগুনে বেড়ে যায়। 

বর্তমানে এই খুনিটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও রিমোট কন্ট্রোল মেশিন ব্যবহার করা হয় এবং শ্রমিকদের সেফটি নিশ্চিত করা হয়।

২। Witwatersrand Basin খনি

Witwatersrand Basin দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রাচীন যত খনি আছে তার মধ্যে অন্যতম প্রাচীনতম খনি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বর্ণ খনি এলাকা। এটি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের স্বর্ণ শিল্পের জন্য একটি বিপ্লবী কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এই খনি এলাকার ইতিহাস বহু যুগ  ধরে বিস্তার লাভ করে আছে, যা খনির উৎপাদন, প্রযুক্তি, শ্রমিক ও সামাজিক প্রভাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। 

Witwatersrand-এর খনি অঞ্চলের ইতিহাস শুরু হয় ১৮ শতকের মাঝামাঝি, যখন খনিতে স্বর্ণের প্রাথমিক খোঁজ চালানো হয়। সেই সময় স্থানীয় প্রাকৃতিক খনি এবং নদীর পাথরের মধ্যে স্বর্ণ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল।

১৮৬০–১৮৭০ সালের দিকে প্রথমে স্থানীয়রা ছোট খনির মাধ্যমে স্বর্ণ উত্তোলন শুরু করে। 

এই সময় প্রাথমিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো বিশেষ করে হাতের যন্ত্রপাতি এবং প্রাথমিক স্বর্ণ উত্তোলনের কৌশল ব্যবহার করা হতো। 

এবং এই খুনি থেকে সীমিত পরিসরে স্বর্ণ উত্তোলন করা হলেও এই স্বর্ণর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হতে থাকে। 

এই সময়ে খনির প্রাথমিক উৎপাদন ছিল খুব সীমিত, কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আন্ডারগ্রাউন্ড খনন পদ্ধতি তখন বিদ্যমান ছিল না। এবং ধীরে ধীরে এই স্বর্ণের চাহিদা বাড়তে থাকে এবং উত্তোলন এর হার ও বেড়ে যায়। এবং সময়ের পরিক্রমায় এখন বিশ্বের বড় স্বর্ণ উত্তোলন খনির মধ্যে এই খুনিটি অন্যতম। 





২০শ শতকের প্রথম দিকে Witwatersrand Basin খনির অবস্থান এবং ইতিহাস। 


২০শ শতকের প্রথম দিকে Witwatersrand Basin খনির অবস্থান এবং ইতিহাস। 

এই সময়ে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং তেমন একটা ব্যবহার করা শুরু হয়নি সামান্য পরিসরে শুরু হয়েছে এবং বেশি গভীরে গিয়ে খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন করা যেত না। এবং ধীরে ধীরে মেশিনারি ব্যবহার করা শুরু হলো যেমন রিয়েল ব্লাস্টিক প্রযুক্তি এবং কেন ভিউয়ার বেল্ট ইত্যাদি। 

এবং ধীরে ধীরে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সাময়িকভাবে সেন্সর এবং ভেন্টিলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু হলো। 

এর প্রভাবে খনির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক স্বর্ণ বাজারে সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বর্ণ শিল্প বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনি শিল্পের মধ্যে পরিণত হয়।


১৯৬০-এর পর Witwatersrand Basin খনিতে প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়। এবং এই খনিটির গভীরতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

বর্তমানে খুনিটির ৩,৯০০ মিটার গভীর। শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে ডিপ কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তারপরে এত গভীরে থাকার পরেও শ্রমিকরা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে। 

এবং বর্তমানে যে সমস্ত যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সমস্ত যন্ত্রের রিমোট কন্ট্রোল মেশিন এবং অত্যন্ত হাই প্রযুক্তি সম্পন্ন নিরাপত্তা এবং কার্যকরী মেশিন। যার ফলে কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই স্বর্ণ উত্তোলন করা যায় এবং রিফাইন করা যায়। 


বর্তমানে, এই খনিটি  শুধুমাত্র স্বর্ণ উৎপাদনের কেন্দ্র নয়, এটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্র।


Witwatersrand Basin খনি দক্ষিণ আফ্রিকার গর্ব, যা প্রায় ১৮৮৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রথম থেকে  এই খনি হাতের খনন থেকে আধুনিক রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি পর্যন্ত, বিভিন্ন  শিল্প ও প্রযুক্তির বিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। এই খনির ইতিহাস শুধু অর্থনীতির নয়, মানুষের অধ্যবসায়, উদ্ভাবন এবং পরিবেশ সচেতনতার একটি উদাহরণ। 
Previous Post