Habib Wahid Debuts in Coke Studio Bangla

কোক স্টুডিও বাংলায় হাবিব ওয়াহিদের অভিষেক: ‘মহা জাদু’তে বাংলা–ফারসি ফিউশন


হাবিব ওয়াহিদের কোক স্টুডিও বাংলা তে অভিষেক, যেখানে মোহা জাদু ফিউশন দিয়ে ঐতিহ্য ও আধুনিক সুরের দারুণ মিশ্রণ উপভোগ করুন।

বাংলাদেশের আধুনিক সংগীতজগতে হাবিব ওয়াহিদ এক অনন্য নাম। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দেশীয় সংগীতপ্রেমীদের জন্য উপহার দিয়েছেন নতুন ধাঁচের সুর, যেখানে বাঙালি লোকসংগীতের ঐতিহ্যকে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ও ইলেকট্রনিক সাউন্ডের সঙ্গে মিশিয়ে এক নতুন ধারা তৈরি করেছেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এত দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ার থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনো কোক স্টুডিও বাংলার মঞ্চে হাজির হননি। অবশেষে ভক্তদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কোক স্টুডিও বাংলা সিজন ৩–এর ষষ্ঠ গানে তিনি অভিষেক করলেন। গানটির নাম “মহা জাদু”, যা বাংলা ও ফারসি দুই সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন।


Habib Wahid Debuts in Coke Studio Bangla with Moha Jadu Fusion


“মহা জাদু” গানটি নতুন ফিউশনের আগমন


“মহা জাদু” গানটি শুধু কোক স্টুডিওর আরেকটি সংযোজন নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক পরীক্ষণ। এখানে একদিকে রয়েছে বাংলার বাউল-ম mystic ঐতিহ্য, অন্যদিকে ফারসি সুফি কবিতার আবেশ। এই দুই ভিন্ন ধারার মিলনেই তৈরি হয়েছে এক অনন্য ফিউশন, যা শ্রোতাদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।


গানের নামের মধ্যেই রয়েছে গভীর তাৎপর্য। “জাদু” শব্দটি যেমন বাংলায় ব্যবহৃত হয়, তেমনি ফারসিতেও প্রচলিত। এই মিল গানের মূল বার্তাকে আরও দৃঢ় করেছে—সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকলেও মানুষের অনুভূতি ও আবেগে রয়েছে এক অদৃশ্য যোগসূত্র।


হাবিব ওয়াহিদের কোক স্টুডিও অভিষেক 

বাংলাদেশি সংগীতে হাবিব ওয়াহিদ একটি ব্র্যান্ড নাম। তার হাত ধরে বাংলার সংগীতে ইলেকট্রনিক বিটসের ব্যবহার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এত সাফল্যের মাঝেও কেন তিনি কোক স্টুডিওতে ছিলেন না, তা নিয়ে ভক্তদের মাঝে কৌতূহল ছিল অনেক।


“মহা জাদু”তে তিনি শুধু কণ্ঠই দেননি, বরং পুরো সংগীতায়োজনও পরিচালনা করেছেন। তার সাজানো এই ফিউশন একদিকে ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যদিকে আধুনিকতার সার্থক প্রয়োগ। তার গাওয়া অংশগুলো বাংলার লোকগানের আবেগ বহন করেছে, আর বাদ্যযন্ত্রের বিন্যাসে এসেছে আধুনিকতার ঝলক।


সীমান্ত পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা


এই গানটিকে বিশেষ করে তুলেছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন তাজিকিস্তানের গায়িকা মেহরনিগর রুস্তম। তার কণ্ঠে ফারসি অংশগুলো সুফি ঘরানার আধ্যাত্মিক আবেদন তৈরি করেছে। গানের ফারসি লিরিক্স লিখেছেন হাদিস দেহগান।


বাংলা অংশ এসেছে দুরবিন শাহের শিষ্য খোয়াজ মিয়া–র আধ্যাত্মিক কবিতা থেকে। ফলে গানটিতে একসঙ্গে পাওয়া যায় বাংলার বাউল ম mystic আবহ আর ফারসির সুফি রস। দুই সংস্কৃতির এই মিলনে গানটি হয়ে উঠেছে সীমান্তহীন এক সঙ্গীতানুষ্ঠান।


সুর ও সঙ্গীতের জাদু


“মহা জাদু”র সঙ্গীতে শোনা যায় এক বিশেষ ধাঁচ। হাবিব ওয়াহিদ এখানে ব্যবহার করেছেন ইলেকট্রনিক–ফোক ফিউশন। গানের শুরুতে লোকসংগীতের সহজ সুর ধীরে ধীরে ইলেকট্রনিক বিটসে রূপ নেয়। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাউল গানের আবহ বজায় থাকলেও পুরো সাউন্ডস্কেপে আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট।


মেহরনিগরের কণ্ঠে ফারসি অংশগুলো শুনতে অত্যন্ত আধ্যাত্মিক। আর হাবিবের কণ্ঠ বাংলার মাটির গন্ধ বহন করে। ফলে গানটি শ্রোতাদের কাছে একাধারে পরিচিত আবার নতুনও মনে হয়। অনেকে বলেছেন, এই গান শুনলে মনে হয় যেন পুরোনো আর নতুন, দেশি আর বিদেশি—সব একসঙ্গে মিলেমিশে গেছে।


মিউজিক ভিডিওর উপস্থাপনা

গানের সঙ্গে প্রকাশিত ভিডিওটিও বেশ সাড়া ফেলেছে। ভিডিওতে মেহরনিগরকে দেখা যায় সাদা পোশাকে, যেখানে তিনি আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে হাবিব ওয়াহিদকে দেখা যায় কীবোর্ড বাজাতে, আধুনিক পোশাকে, চোখে সানগ্লাসে।


এই ভিজ্যুয়াল কনট্রাস্টই আসলে গানের মূল দর্শনকে তুলে ধরে—প্রাচীন ও আধুনিক, আধ্যাত্মিকতা ও প্রযুক্তি, দুই মিলে এক নতুন জাদু।


ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব


বাংলা ও ফারসি ফিউশন একেবারেই নতুন কিছু নয়। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ফারসি ভাষা একসময় বাংলার দরবারি ভাষা ছিল। বাংলার সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিতে ফারসির প্রভাব আজও দৃশ্যমান। অনেক বাংলা শব্দ এসেছে ফারসি থেকে, অনেক কবিতার ধাঁচেও রয়েছে ফারসির ছাপ।


“মহা জাদু” সেই পুরনো ঐতিহাসিক বন্ধনকে আধুনিক রূপে পুনর্জাগরিত করেছে। আজকের তরুণ প্রজন্ম হয়তো ইতিহাস জানে না, কিন্তু সংগীতের মাধ্যমে তারা সেই সংস্কৃতির মিলন অনুভব করতে পারবে।


শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া


গানটি প্রকাশের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সাড়া ফেলেছে। ইউটিউবের কমেন্ট সেকশনে ভক্তরা হাবিব ওয়াহিদের কোক স্টুডিও অভিষেককে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, এই গান তাদেরকে ভিন্ন জগতে নিয়ে গেছে।


বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক শ্রোতারা গানটি উপভোগ করেছেন। বিশেষ করে যারা ফারসি ভাষা বোঝেন, তারা মেহরনিগরের কণ্ঠে গভীরতা খুঁজে পেয়েছেন। ফলে গানটি একেবারে সীমান্ত ছাড়িয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে আলোচনায় এসেছে।


হাবিব ওয়াহিদের  ‘মহা জাদু’ কেন আলাদা


  • হাবিব ওয়াহিদের প্রথম কোক স্টুডিও অংশগ্রহণ।


  • বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তানের শিল্পীর সহযোগিতা।


  • বাংলা লোকগান ও ফারসি সুফি কবিতার সমন্বয়।


  • আধুনিক ইলেকট্রনিক বিন্যাসের সঙ্গে ঐতিহ্যের মিশ্রণ।


  • বাংলার সঙ্গে ফারসির ঐতিহাসিক যোগসূত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা।


“মহা জাদু” দেখিয়ে দিয়েছে, কোক স্টুডিও বাংলা ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করতে সক্ষম। শুধু দেশীয় শিল্পী নয়, আন্তর্জাতিক শিল্পীদের যুক্ত করে এই প্ল্যাটফর্ম বৈশ্বিক মানের গান উপহার দিতে পারবে।

হাবিব ওয়াহিদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে ক্যারিয়ারের আরেকটি বড় মাইলফলক। আর শ্রোতাদের জন্য এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যেখানে তারা একসঙ্গে পেয়েছে লোকসংগীতের আবেগ, আধুনিক সাউন্ডের উচ্ছ্বাস, আর আন্তঃসংস্কৃতির সেতুবন্ধন।


শেষকথা


“মহা জাদু” শুধু একটি গান নয়, বরং এটি এক সাংস্কৃতিক আয়োজন। কোক স্টুডিও বাংলায় হাবিব ওয়াহিদের অভিষেক, মেহরনিগর রুস্তমের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, আর বাংলা–ফারসি ফিউশনের সার্থক প্রয়োগ—সব মিলে এটি হয়ে উঠেছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

সংগীতের জগতে অনেক ফিউশনই হয়েছে, কিন্তু “মহা জাদু” বিশেষভাবে প্রমাণ করেছে যে, সংগীত আসলেই ভাষা ও সীমান্তের ঊর্ধ্বে। সঠিকভাবে উপস্থাপন করলে সংগীত হতে পারে সবচেয়ে বড় জাদু।


Next Post Previous Post